ওয়েব ডেস্ক: দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথাবার্তায় আমার মনে হয়েছে খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, এটা তাদের পছন্দ হয়নি।’
সোমবার (২৮ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জীবনরক্ষার বৃহত্তর প্রয়োজনে সরকার সর্বাত্মক লকডাউন দিচ্ছে। এই লকডাউনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনী থাকবে। এবার কেউ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তারা (বিএনপি) খুব বেশি চিন্তিত না। ওনারা চান খালেদা জিয়া আরও বেশি অসুস্থ হোক। প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়া যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরত গেছেন এটি বিএনপির নেতৃবৃন্দের পছন্দ হয়নি। তাদের বক্তব্যে আমার কাছে মনে হয়েছে- খালেদা জিয়া হাসপাতালে থাকলে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের রাজনীতি করতে সুবিধা হয়। আসলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তারা রাজনীতিটাই করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন খালেদা জিয়া দেশে অত্যন্ত সুচিকিৎসা পেয়েছেন। যে কারণে তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি যদি সুচিকিৎসা না পেতেন, তাহলে তিনি সুস্থ হতেন না এবং বাড়ি ফিরেও যেতে পারতেন না। সরকার তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। পছন্দের ডাক্তাররাই তার চিকিৎসা দিয়েছে।’
‘এখন খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, তার জন্য বিএনপির তো সরকারকে ধন্যবাদ দেয়া প্রয়োজন। তিনি আদালত থেকে জামিন পাননি, খালাসও পাননি, এরপরও তিনি জেলখানার বাইরে আছেন এবং সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন,’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জনগণ যেদিন জেগে উঠবে সেইদিন আওয়ামী লীগ পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘তাদের দলের নেতা মুচলেকা দিয়েছিলেন যে কখনো রাজনীতি করবেন না। সেই মুচলেকা দিয়ে পলাতক আছেন। যাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন পলাতক অবস্থায় আছেন, তাদের দলের মহাসচিব কখন পালাতে পারেন সেই আশঙ্কা থেকেই হয়ত তিনি এ কথাগুলা বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলামের এসব কথাবার্তা আমরা বহু আগে থেকেই শুনে আসছি, আসলে মানুষ হাসে। এই কথাগুলো মানুষের হাসির উদ্বেগ করে। বিএনপির এই কথাগুলো কৌতুকের মতো মনে হচ্ছে। যাদের চেয়ারপারসন নিজেই পলাতক, সেই দলের মহাসচিব মধ্যে সব সময় পলায় পলায়, সেই কথাটাই ঘুরপাক খায়।’
সরকারের উদাসীনতায় মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বিএনপি মহাসচিবের এমন অভিযোগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটেছে। এটি একটি দুর্ঘটনা। আমাদের দেশে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের পর থেকে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটির মধ্যেও রাজনীতি নিয়ে আসা, সরকারকে নিয়ে আসা…। টায়ার ব্লাস্ট হলেও কখন যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলে বসেন সরকারের উদাসীনতার কারণে ঘটেছে, আমি সেই চিন্তাই এখন করছি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজন ছিল, সেটা মানছে না এবং বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগে যে ভীতিটা ছিল, সেটাও এখন আর নেই। সে কারণে করোনা দ্রুত ছাড়াচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সোমবার থেকে লকডাউনের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে যেহেতু ৩০ জুন অর্থবছর শেষ হতে যাচ্ছে, সেই বিবেচনায় পরিপূর্ণ লকডাউনের পরিবর্তে কিছু বিধিনিষেধ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। আর ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউন দেয়া হয়েছে। এই লকডাউন কার্যকর করার জন্য সরকার পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি এবং সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় জায়গায় মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
অফিস খুলে রেখে গণপরিবহন বন্ধ রাখায় মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অফিসগুলোকে তাদের নিজেদের মানুষগুলোকে আনা-নেয়া করতে হবে এবং স্বল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে অফিস করার জন্য বলা আছে। বিভিন্ন অফিসগুলো সেই ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। যখন শাটডাউন হবে, তখন কিছু মানুষের অসুবিধা হবে তা তো নয়, কিন্তু বৃহত্তর প্রয়োজনে, জীবনরক্ষার প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়।’